সোস্যাল মিডিয়ায় সত্য মিথ্যার লড়াই"
বেল্লাল হোসাইন
ভারতের " আইডিয়া " নামক একটা মোবাইল কোম্পানি সম্প্রতি একটা ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালিয়েছে। তারা নানা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকজনকে সোস্যাল মিডিয়াতে সত্যিকারের অবস্থা তুলে ধরতে উৎসাহ দিচ্ছে। তারা বিজ্ঞাপনে দেখিয়েছে একজন মহিলা সংসারে অসুখী। একাকিত্ত্ব তার নিত্য সংগী। কিন্তু তার ফেসবুক পোস্ট পার্টি, হইহুল্লোড়ে ভরা! এমন আরো কিছু ভিন্ন ভিন্ন চিত্র তারা তুলে ধরেছে।
কিন্তু তাদের আহব্বান অতটা জনপ্রিয়তা পায় নাই।
এর কারন কী?
আসলে আমাদের দেখানোর প্রবৃত্তিটা ইদানিং অনেক বেশি। যা আছে সেটাতো সবাই জানেই। যা নাই তাও বানিয়ে দেখাতে হয়। এই দেখানদারিতা একটা প্রতিযোগিতা। অংশীজনেরা কেউ বুঝে কেউ না বুঝে একটা শীতল স্রোতে আমুদে ভেসে চলেছি কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে মোহনা পার হয়ে গভীর সমুদ্রে সব বিলীন হয়ে যেতে পারি সেই খেয়াল করছি না।
নার্সিজমের সবচেয়ে বড় কুপ্রভাব নিজেকে বেস্ট ভাবার প্রভাবে কিছু লোক ধীরে ধীরে অন্যের অভ্যাস,সামাজিক স্ট্যাটাস, মতকে অশ্রদ্ধা করতে শুরু করে। আচরণে বিনয় উঠে যায় আর আমিত্ত্বের জয়জয়কার হয়। অথচ বাস্তবে সেই ভার্চুয়াল কিং তো সাধারণ প্রজাই থেকে যায়।
ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তবের জীবনের মিল না থাকায় পরিচিত লোকেদের এড়িয়ে চলার প্রবনতা তৈরি হয়। কারন তাদের কাছে মিথ্যা হিরো সাজা যায় না। ফলে কাছের মানুষের সাথে বন্ধন কমে যায়। এতে আমরা একা,অসহায় হয়ে পরি।
আমাদের জীবনে ভার্চুয়াললি এটাচড লোকেদের অবদান লাইক,কমেন্টস দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই নাই! ব্লক মেরে দিলে ল্যাটা চুক।
এখনতো, ভোগের উপায় উপকরণের বহুমুখিতার কারনে চারপাশে বাহারি পণ্যের পসরা। উন্নত জীবনের স্বপ্ন,চেষ্টা সবারই থাকে। স্বপ্নকে ছুঁতে আমরা সবাই সাধ্যমতো চেষ্টাও করি। কিন্তু অর্জনের আগেই দেখানোর প্রবণতা আমাদের অধিক প্রতিযোগিতার দিকে পুশ করে,ফলাফল অনেকেই হোচট খেয়ে ফেলি। তবে যার সত্যিই দেখাবার মত অনেক আছে তার অবশ্যই দেখাতে বাধা নাই। অন্যের অর্জন আর ভালোটা সহ্য করে নেয়ার মানসিকতা থাকতেই হবে। এখান থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। নিজেকেও অর্জনমুখী করা যায়।
দুঃখ সংক্রামক। লোকের দুঃখ দেখে নিজের গ্লানি মনে পরে যায়। অথচ সেই হারে সুখটা ছড়ায় না। অন্যের সুখের বার্তা নিজের মনে দখিনা হাওয়া বয়ে না এনে মনের মাঝে বিষাদ কালো মেঘ জমায়। সবই আমাদের ভাবনা জগতের বৈকল্য।
অনেকে প্রাচুর্যের মাঝে থেকেও দুঃখবিলাসী। কেউবা টাইটানিকের হিরো (নিস্ব) হয়েও টাটা বিরলার ভাব নিই।
কিন্তু ফেইক লোকেদের ফেইক অ্যাচিভমেন্ট,আনন্দের আতিশয্য দেখে নিজেকে দুঃখের সাগরে ডুবাবার কিছু নাই।
বাস্তব অবস্থাটা স্পষ্ট হলে,কোনো সাহায্য না পাওয়া গেলেও এটলিস্ট সবার দোয়া,শুভ কামনাটা চাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে ডিপার্টমেন্টে, হলে সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়। ফ্যামিলিকে ইনট্রোডিউস করে। এটা সাধারণ ট্রেন্ড। অবাক হয়ে লক্ষ করেছিলাম আমার বাবা ছাড়া বেশিরভাগ বন্ধুর বাবারা, যারা সুনির্দিষ্ট কোনো জব করে না, তারা পেশায় ব্যবসায়ী! কেবল আমিই কৃষকের ছেলে! অথচ ৫/৬ বছরের আন্তরিক মেলামেশায় অনেকেরই ঘরের লোক হয়ে দেখলাম আমরা সবাইই এক!
এতে যতটা না পরিচয় লুকানোকারীর দোষ, তার চেয়ে বেশি দোষ পরিচয় জেনে নাক সিটকানি লোকেদের।
আমাদের অনেকেরই শিক্ষাজীবনের ভিত শুরু হয় মিথ্যা দিয়ে। বছরের বিশেষ একটা দিনে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীদের জন্মদিন এর সাক্ষ্য দেয়।
বয়স লুকানো দিয়ে শুরু,ফাইল আটকানো দিয়ে শেষ। মাঝখানে কিছু বই কচলিয়ে জ্ঞানের দেমাগ দেখে কে!
অযাচিত হায় হুতাশ থেকে বাচতে নিজের আসল অবস্থান তুলে ধরা দরকার।
সমাজ আমাদের অন্তত সত্য বলে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিক।
লেখকঃ শিক্ষানবিস আইনজীবী ও সমাজকর্মী।
ইমেইলঃ bellal.sincere@gmail.com
ভারতের " আইডিয়া " নামক একটা মোবাইল কোম্পানি সম্প্রতি একটা ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালিয়েছে। তারা নানা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকজনকে সোস্যাল মিডিয়াতে সত্যিকারের অবস্থা তুলে ধরতে উৎসাহ দিচ্ছে। তারা বিজ্ঞাপনে দেখিয়েছে একজন মহিলা সংসারে অসুখী। একাকিত্ত্ব তার নিত্য সংগী। কিন্তু তার ফেসবুক পোস্ট পার্টি, হইহুল্লোড়ে ভরা! এমন আরো কিছু ভিন্ন ভিন্ন চিত্র তারা তুলে ধরেছে।

এর কারন কী?
আসলে আমাদের দেখানোর প্রবৃত্তিটা ইদানিং অনেক বেশি। যা আছে সেটাতো সবাই জানেই। যা নাই তাও বানিয়ে দেখাতে হয়। এই দেখানদারিতা একটা প্রতিযোগিতা। অংশীজনেরা কেউ বুঝে কেউ না বুঝে একটা শীতল স্রোতে আমুদে ভেসে চলেছি কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে মোহনা পার হয়ে গভীর সমুদ্রে সব বিলীন হয়ে যেতে পারি সেই খেয়াল করছি না।
নার্সিজমের সবচেয়ে বড় কুপ্রভাব নিজেকে বেস্ট ভাবার প্রভাবে কিছু লোক ধীরে ধীরে অন্যের অভ্যাস,সামাজিক স্ট্যাটাস, মতকে অশ্রদ্ধা করতে শুরু করে। আচরণে বিনয় উঠে যায় আর আমিত্ত্বের জয়জয়কার হয়। অথচ বাস্তবে সেই ভার্চুয়াল কিং তো সাধারণ প্রজাই থেকে যায়।
ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তবের জীবনের মিল না থাকায় পরিচিত লোকেদের এড়িয়ে চলার প্রবনতা তৈরি হয়। কারন তাদের কাছে মিথ্যা হিরো সাজা যায় না। ফলে কাছের মানুষের সাথে বন্ধন কমে যায়। এতে আমরা একা,অসহায় হয়ে পরি।
আমাদের জীবনে ভার্চুয়াললি এটাচড লোকেদের অবদান লাইক,কমেন্টস দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই নাই! ব্লক মেরে দিলে ল্যাটা চুক।
এখনতো, ভোগের উপায় উপকরণের বহুমুখিতার কারনে চারপাশে বাহারি পণ্যের পসরা। উন্নত জীবনের স্বপ্ন,চেষ্টা সবারই থাকে। স্বপ্নকে ছুঁতে আমরা সবাই সাধ্যমতো চেষ্টাও করি। কিন্তু অর্জনের আগেই দেখানোর প্রবণতা আমাদের অধিক প্রতিযোগিতার দিকে পুশ করে,ফলাফল অনেকেই হোচট খেয়ে ফেলি। তবে যার সত্যিই দেখাবার মত অনেক আছে তার অবশ্যই দেখাতে বাধা নাই। অন্যের অর্জন আর ভালোটা সহ্য করে নেয়ার মানসিকতা থাকতেই হবে। এখান থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। নিজেকেও অর্জনমুখী করা যায়।
দুঃখ সংক্রামক। লোকের দুঃখ দেখে নিজের গ্লানি মনে পরে যায়। অথচ সেই হারে সুখটা ছড়ায় না। অন্যের সুখের বার্তা নিজের মনে দখিনা হাওয়া বয়ে না এনে মনের মাঝে বিষাদ কালো মেঘ জমায়। সবই আমাদের ভাবনা জগতের বৈকল্য।
অনেকে প্রাচুর্যের মাঝে থেকেও দুঃখবিলাসী। কেউবা টাইটানিকের হিরো (নিস্ব) হয়েও টাটা বিরলার ভাব নিই।
কিন্তু ফেইক লোকেদের ফেইক অ্যাচিভমেন্ট,আনন্দের আতিশয্য দেখে নিজেকে দুঃখের সাগরে ডুবাবার কিছু নাই।
বাস্তব অবস্থাটা স্পষ্ট হলে,কোনো সাহায্য না পাওয়া গেলেও এটলিস্ট সবার দোয়া,শুভ কামনাটা চাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে ডিপার্টমেন্টে, হলে সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়। ফ্যামিলিকে ইনট্রোডিউস করে। এটা সাধারণ ট্রেন্ড। অবাক হয়ে লক্ষ করেছিলাম আমার বাবা ছাড়া বেশিরভাগ বন্ধুর বাবারা, যারা সুনির্দিষ্ট কোনো জব করে না, তারা পেশায় ব্যবসায়ী! কেবল আমিই কৃষকের ছেলে! অথচ ৫/৬ বছরের আন্তরিক মেলামেশায় অনেকেরই ঘরের লোক হয়ে দেখলাম আমরা সবাইই এক!
এতে যতটা না পরিচয় লুকানোকারীর দোষ, তার চেয়ে বেশি দোষ পরিচয় জেনে নাক সিটকানি লোকেদের।
আমাদের অনেকেরই শিক্ষাজীবনের ভিত শুরু হয় মিথ্যা দিয়ে। বছরের বিশেষ একটা দিনে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীদের জন্মদিন এর সাক্ষ্য দেয়।
বয়স লুকানো দিয়ে শুরু,ফাইল আটকানো দিয়ে শেষ। মাঝখানে কিছু বই কচলিয়ে জ্ঞানের দেমাগ দেখে কে!
অযাচিত হায় হুতাশ থেকে বাচতে নিজের আসল অবস্থান তুলে ধরা দরকার।
সমাজ আমাদের অন্তত সত্য বলে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিক।
লেখকঃ শিক্ষানবিস আইনজীবী ও সমাজকর্মী।
ইমেইলঃ bellal.sincere@gmail.com
Comments
Post a Comment