আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকার

বেল্লাল হোসাইন

একটু ভিন্নভাবে আলোচনা শুরু করা যাক।
আব্রাহাম মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্বটি দেখে নেই।

মাসলো মানুষের পাঁচ ধরনের প্রয়োজনকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
ক) প্রাথমিক বা নিম্ন শ্রেণীর প্রয়োজন
১. দৈহিক বা মৌলিক চাহিদা
হতাশা, যা আত্মহত্যার প্রধান কারন
২. নিরাপত্তার চাহিদা
খ) উচ্চ শ্রেণীর প্রয়োজন
১. প্রতিপত্তি ও প্রীতির চাহিদা
২. আত্মমর্যাদার চাহিদা
৩. আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদা
চাহিদা সোপান তত্ত্বের সর্বনিম্ন চাহিদা- দৈহিক বা মৌলিক চাহিদা এবং
চাহিদা সোপান তত্ত্বের সর্বোচ্চ চাহিদা- আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদা।

বাংলাদেশের মানুষেরা এখন চাহিদার সর্বোচ্চ স্তর পূরণের লক্ষ্যে বলব না বরং বিলাসিতায় নেমেছে। ভাত কাপড়ের অভাব নাই, পোলাও কোর্মায় রুচি নাই,ফ্রাইড রাইসের কালার নিয়া ব্যস্ত সবাই। এই অশুভ মিছিলের অগ্রভাগে দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা এগিয়ে আছে তারা হলো সমাজের শিক্ষিত শ্রেণীর লোকেরা। অন্যের ভালোটা হজম করার ডাইজেস্ট পাওয়ার না থাকার ফলে কেউ কিছু একটা অর্জন করলে সেটা নিজেকেও জিততে হবে মানসিকতার জন্য দিনশেষে নিজেকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

নিজের মগজের জোর থাকুক আর না থাকুক টপার আমাদের হতেই হবে। ব্যস! হয়ে গেলো। ছোটবেলা থেকে তুলনা আর তুলনা। ও পারে, তুই পারিস না,তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না,না পারলে ঘরে আসবি না ইত্যাদি কুবচন শুনতে শুনতে বাচ্চারা যেন সবাই ল্যাং মারা শিখতে শিখতেই বড় হচ্ছে।

সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রেশার নিতে যেয়ে ব্যর্থতা যখন অবধারিত হয়ে যায়,তখন লোকের বিশেষ করে আপনজনের বাজে কথা যাতে শুনতে না হয় সেজন্য অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
সাইকোলজি টুডে আত্মহত্যার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন যার মধ্যে হতাশা,দুশ্চিন্তা,ব্যর্থতা আবেগের তাড়না, সহযোগিতা না পাওয়া, মনোকষ্ট ও চলার পথের ভুল সিদ্ধান্তগুলোকে দায়ী করেন।
বাংলাদেশীদের আত্মহত্যার আরেকটি বড় কারণ শিরিন-ফরহাত,লাইলি-মজনুর অনুপ্রেরণা অর্থাৎ প্রেমে ব্যর্থতা!

একবার ভাবুন তো ওই উল্লেখিত কারণগুলোর কী এতটা শক্তিশালী হবার কথা যে মরে যেতে বাধ্য করে? আর্থিক সংকট নিজেকে ছোট ভাবার সবচেয়ে বড় কারণ। আমি মনে করি ইগোটা কমিয়ে যেকোন কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে পারলে কর্মহীন থাকার সম্ভাবনা থাকে না। সবাইকে দিয়ে সব হবে না এই প্রাকৃতিক সত্যকে যতদিন পর্যন্ত নিজে ও কাছের স্বজনের কাছে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত ও বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না, ততদিন এই অকাল মৃত্যুর মিছিল শেষ হবে না।

আরে ভাই নিজের একটা পেট তো! সেটা সামান্য পরিশ্রম করলেই চলে যায়। যে পরিবারকে সুরক্ষা দিতে এত প্রেশার নেয়া,মরে যাওয়া, আপনি মরে যাবার পর তারা কী হীরা জহরত পাবে একবার ভাবেন?

আপনি নিজে ভালোভাবে বেঁচে থাকলে আপনার দায়িত্ব কর্তব্যের ব্যাপার সামনে আসবে। আপনার নিজের সারভাইভ করতে কষ্ট হলে,অন্যদের সাহায্য করা আপনার দায়ের মধ্যে পরে না। বেশি দায়িত্বশীল হতে যেয়ে নিজে চিৎপটাং হলে ক্ষতিটা বেশি এটা বুঝতে হবে।
এতকিছুর পরও আত্মহত্যা প্রতিরোধে সামাজিক দায় পুরোপুরি এড়ানো যায় না। মৃত্যুর মত করুণ বাস্তবকে যারা আলিঙ্গন করছে তাদের দুঃখবোধ আমাদের বুঝতে হবে। সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার অভাবে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরতে পারে। তাই সমস্যার মূলে ভাবতে হবে।

এছাড়া নিজের মধ্যে কিছু গুনাবলি লালন করতে হবে। স্বাভাবিক-সাধারণ জীবনযাপন করুন,লোভ সামলান,অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি দেন,পরিশ্রম করুন,যেকোন কাজকে শ্রদ্ধা করুন,জীবনকে ভালোবেসে জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখুন। ইতিবাচক চিন্তা করুন, ইতিবাচক বন্ধুদের সাথে মিশুন। সম্পর্কগুলোকে মর্যাদা দিন,স্বার্থপরতা ছাড়ুন। নিজের ও অন্যের ভালোভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি করুন।
মুরুব্বিরা দয়া করে চাই চাই বন্ধ করুন।
স্রষ্টা সবাইকে সুস্থ্যায়ু দান করুন।

লেখকঃ আইনজীবী ও সমাজকর্মী

Comments

Popular posts from this blog

২৬ এর মামলা কি! কেন মারামরি হলেই ২৬ এর মামলা করতে চাই।

কোন দলিলে কত টাকার স্ট্যাম্প লাগবে

সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেফতার ও সামরিক বরখাস্ত কখন এবং কিভাবে হয়।