নেতার হাতে নেতৃত্ব না থাকার কুফল

বেল্লাল হোসাইন

যে কাজে কমিটমেন্ট আর রেসপনসিবিলিটির বালাই নাই সে কাজে কর্তার মনোযোগ থাকারও অবকাশ নাই। রাজনীতিতে ইতোমধ্যে যে শুন্যতা তৈরি হয়েছে তা অনুপ্রবেশকারী রাজনীতিকদের কারণে আরো ঘনীভূত হবে।
জাতীয় সংসদ
সংসদ সদস্য হওয়ার খায়েশ বাসনায় রাজনীতির বাইরের মানুষের আগ্রহ দিনকেদিন এমন হারে বেড়েছে যে ত্যাগী পেশাদার রাজনীতিকরা তাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
জনবিচ্ছিন্ন লোকেরা আজ জননেতা সাজার চেষ্টা করছে। ছাত্রজীবন থেকে যেসব নেতারা দলীয় আদর্শ ধ্যান ধারণা লালন করে বড় হয়েছেন তাদের চেয়ে নতুন করে দল ও জনগণকে ভালোবাসা নেতারা বহুবার গিরগিটি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিকরা তাদের অস্তিত্ব টিকাতে পয়সা আর পেশীর ব্যবহার বেশি করেন। পেটোয়া বাহিনী লালন করে তারা জনগণকে নিগ্রহ করেন। রাজনীতি যদি ব্যবসায় করার হাতিয়ার হয়ে ওঠে তখন জনগণকে তার চড়া মুল্য দিতে হয়। যুগে যুগে আমরা সাধারণেরাই তুরুপের তাস ছিলাম।
মার্টিন লুথার কিং
গণতন্ত্রের একটা ভাল দিক হলো অন্তত মেয়াদ শেষে উপেক্ষিত জনগণের কাছে আবার নেতাদের ফিরতে হয়। জনগণের দয়ার দান ছাড়া কেউ জননেতা হতে পারে না। কিন্তু মার্কার লাটিমে ভর করে আগন্তুকেরা রাজনীতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। মৌসুমী রাজনীতিকদের সংকটকালে তৃণমূলের নেতা কার্মীরা কাছে তো পায়ই না, সাধারণ জনগণও তাদের সেবা বঞ্চিত হয়। সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ব্যবসায়ী এমপি মহোদয়দের এলাকায় টর্চ জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ নম্বর অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের কাজ আইন প্রণয়ন করা উল্লেখ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদের কিছু অংশ উদ্ধৃত করা হলো।
"৬৫। (১) "জাতীয় সংসদ" নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকিবে এবং এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইনপ্রণয়ন-ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, সংসদের আইন দ্বারা যে কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন বা আইনগত কার্যকরতাসম্পন্ন অন্যান্য চুক্তিপত্র প্রণয়নের ক্ষমতার্পণ হইতে এই দফার কোন কিছুই সংসদকে নিবৃত্ত করিবে না।

(২) একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন। "

উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থানীয় সরকার বিভাগের হাতে থাকলে তখন শুধু আইন প্রণয়ন করার জন্য কেউ সংসদ সদস্য হবার মিছিল এতো লম্বা করতো না। তখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সবার আগ্রহ থাকতো ঈর্ষণীয়।
জনগণের জন্য জনমুখী নেতা তৈরিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা আরো জোরদার না করলে জনগণ একদিন এসব ভূইঁফোর নেতাদের পাশাপাশি দল ও মার্কাকে অবাঞ্চিত করতে পারে।

লেখকঃ আইনজীবী ও সমাজকর্মী।


Comments

Popular posts from this blog

২৬ এর মামলা কি! কেন মারামরি হলেই ২৬ এর মামলা করতে চাই।

কোন দলিলে কত টাকার স্ট্যাম্প লাগবে

সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেফতার ও সামরিক বরখাস্ত কখন এবং কিভাবে হয়।