মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তায় মানসিক চাপ নয়
বেল্লাল হোসাইন
স্টুডেন্ট লাইফে ভিকারুননিসার কমপক্ষে ত্রিশজন ৩য় শ্রেণী থেকে ইন্টারমিডিয়েটের মেয়ে পড়িয়েছি। ২২ জনের একটা ব্যাচ পড়িয়েছি। ক্লাসের টপ স্কোরার থেকে তুলনামূলক দুর্বল বাচ্চা সবাই আমার ব্যাচে ছিল। বাচ্চাদের সাইকোলজি আর স্কুলের কারিকুলাম ও কুকাম সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই ওয়াকিবহাল আছি।
জংগলে যেমন দুর্বল পশু শাবকদের খেয়ে ফেলা হয়, তেমনি ভিকারুননিসায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রীদের গ্রাস করে ফেলা হয়। ওরা ভর্তির সময়ই একটু বেশি বয়স্ক বাচ্চা নেয় যাতে ওদের প্রেশার কুকারে পরে বাচ্চাটি গলে না যায়।
মোটিভেশন, দরদ দিয়ে না পড়িয়ে সব সময় নাই নাই কিচ্ছু হবে না আর সব সময় জীবনের চেয়ে জয়ের দাম বেশি মেথডে পড়ানো হয়। এতে বেশিরভাগ অভিভাবকদের নাই চিন্তা বানিয়ে দুশ্চিন্তা করার অভ্যাস ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব কম দায়ী নয়। ধরুন একটা প্যারাগ্রাফ পড়ানো হবে। সাধারণ স্কুলে টাইগার,লায়ন,জিরাফ ইত্যাদি স্পেসিফিক একটা টপিক পড়ানো হবে। কিন্তু ভিকারুননিসার সিলেবাসে থাকবে বন্যপশু। যেকোনো একটা পশুর নাম উল্লেখ থাকবে তাকে সেটা লিখতে হবে। সেই প্যারাগ্রাফ আবার কোনো প্রচলিত বইয়ের সাথে মিলে গেলে লাড্ডু। তবে টিচারের নিজস্ব হ্যান্ডনোটের সাথে মিলে গেলে আপত্তি নাই!
অনেক জানানোর চেষ্টার সিস্টেমটা ভালো। কিন্তু কার জন্য ভালো? পর্যাপ্ত ম্যাচিউরিটির আগেই রোমাছোমা পড়াইয়া মাথা হ্যাং করে বড় হয়ে সেই বাচ্চাদের বেশিরভাগ বেয়াক্কেল হয়ে যায়। ক্লাস থ্রী ফোরের একটা বাচ্চাকে শুধু একটা প্যারাগ্রাফ নিয়ে যে হ্যাসল পোহাতে হয় তা আর কী বলবো। বয়সের চেয়ে বেশি পন্ডিতি শেখাতে যেয়ে বহু বাচ্চা এই লোড নিতে পারে না। অনেক মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও, নিজেকে অবিশ্বাস করতে শুরু করে। তারা নিজেকে অথর্ব ভাবতে শুরু করে।
প্রাক্টিক্যাল কোনো কাজ দিলে মেয়েদের মায়েরাসহ হোমওয়ার্ক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
হিংসা আর পিছিয়ে পরার জুজুর ভয় দেখিয়ে বাচ্ছাগুলোকে রোবট বানানোর পায়তারা চলছে। বেকুব অভিভাবকগুলোও তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিবাদ না করে মেয়েদের জ্ঞানরাজ্ঞী বানানোকেই সঠিক মনে করে।
ইদানীং মেডিকেল, বুয়েট, ঢাবিসহ পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিকারুননিসার মেয়েদের চান্স পাবার হার আশংকাজনকভাবে কমেছে। এবং কমছে। এর কারণ হলো অসময়ে শক্তি খুইয়ে আসল টাইমে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখতে না পারা।
এখন আসি বাচ্চাগুলোর ব্যাপারে। সমাজ তাদের একটু আলগা খাতির করে বলে তারা অনেকেই নিজেকে খুদে বিজ্ঞানী ভাবতে পছন্দ করে। অনেকে পড়ার চেয়ে বেশি এক্সট্রা ভাব নেয়। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো তাদের ইগো। সবকিছুতে বাবা মা রেস্পন্সিবল কারো সাথে ছ্যান ছ্যান করে ওঠা অনেকের রেগুলার অভ্যাস। তাদের কন্ট্রোল করা কঠিন।
ফলে তারা অপমান নিতে পারে না। শিক্ষকের শাসন মানতে পারে না।
মাস্টারেরা যেমন ছালামের চেয়ে পয়সা পেলেই খুশি,ছাত্রীরাও তাদের কাজের লোক ভাবতেই প্রেফার করে।
শিক্ষকরা যদি অভিভাবকসুলভ আচরণ করতো,মায়া করে কথা বলতো বাচ্চারাও তাদের আপন ভাবতো। তাদের স্বভাবের জন্য বাচ্চাদের কাছে শিক্ষকেরা নিজেদের খেলো করে ফেলেছে।
সময় থাকতে শোধরাতে না পারলে খবর আছে.....
পুনশ্চঃ শিক্ষকের অপমানজনক কথায় আত্মহত্যা করা লাগলে আমাদের স্কুলের শ্রদ্ধেয় ইউসুফ স্যার, বাবলু স্যার,জাহাঙ্গীর স্যার, বিমল স্যার,রাজ্জাক স্যার, কাশেম স্যারদের ক্লাস যারা করেছে তাদের গণহারে ইঁদুরের মত মরে পরে থাকতে হবে। স্যাররা এখনো আমাদের গালাগালি করেন। আমাকে না পেলে আমার বউকে ফোন দিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন! কই আমরা তো মরি নাই। বরং তাদের গালাগালি লাঠালাঠি আমাদের বাচাঁর অনুপ্রেরণা।
লেখকঃ আইনজীবী ও সমাজকর্মী
স্টুডেন্ট লাইফে ভিকারুননিসার কমপক্ষে ত্রিশজন ৩য় শ্রেণী থেকে ইন্টারমিডিয়েটের মেয়ে পড়িয়েছি। ২২ জনের একটা ব্যাচ পড়িয়েছি। ক্লাসের টপ স্কোরার থেকে তুলনামূলক দুর্বল বাচ্চা সবাই আমার ব্যাচে ছিল। বাচ্চাদের সাইকোলজি আর স্কুলের কারিকুলাম ও কুকাম সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই ওয়াকিবহাল আছি।
জংগলে যেমন দুর্বল পশু শাবকদের খেয়ে ফেলা হয়, তেমনি ভিকারুননিসায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রীদের গ্রাস করে ফেলা হয়। ওরা ভর্তির সময়ই একটু বেশি বয়স্ক বাচ্চা নেয় যাতে ওদের প্রেশার কুকারে পরে বাচ্চাটি গলে না যায়।
মোটিভেশন, দরদ দিয়ে না পড়িয়ে সব সময় নাই নাই কিচ্ছু হবে না আর সব সময় জীবনের চেয়ে জয়ের দাম বেশি মেথডে পড়ানো হয়। এতে বেশিরভাগ অভিভাবকদের নাই চিন্তা বানিয়ে দুশ্চিন্তা করার অভ্যাস ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব কম দায়ী নয়। ধরুন একটা প্যারাগ্রাফ পড়ানো হবে। সাধারণ স্কুলে টাইগার,লায়ন,জিরাফ ইত্যাদি স্পেসিফিক একটা টপিক পড়ানো হবে। কিন্তু ভিকারুননিসার সিলেবাসে থাকবে বন্যপশু। যেকোনো একটা পশুর নাম উল্লেখ থাকবে তাকে সেটা লিখতে হবে। সেই প্যারাগ্রাফ আবার কোনো প্রচলিত বইয়ের সাথে মিলে গেলে লাড্ডু। তবে টিচারের নিজস্ব হ্যান্ডনোটের সাথে মিলে গেলে আপত্তি নাই!
![]() |
উচ্চশিক্ষা গ্রহনের পর |
প্রাক্টিক্যাল কোনো কাজ দিলে মেয়েদের মায়েরাসহ হোমওয়ার্ক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
হিংসা আর পিছিয়ে পরার জুজুর ভয় দেখিয়ে বাচ্ছাগুলোকে রোবট বানানোর পায়তারা চলছে। বেকুব অভিভাবকগুলোও তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিবাদ না করে মেয়েদের জ্ঞানরাজ্ঞী বানানোকেই সঠিক মনে করে।
ইদানীং মেডিকেল, বুয়েট, ঢাবিসহ পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিকারুননিসার মেয়েদের চান্স পাবার হার আশংকাজনকভাবে কমেছে। এবং কমছে। এর কারণ হলো অসময়ে শক্তি খুইয়ে আসল টাইমে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখতে না পারা।
এখন আসি বাচ্চাগুলোর ব্যাপারে। সমাজ তাদের একটু আলগা খাতির করে বলে তারা অনেকেই নিজেকে খুদে বিজ্ঞানী ভাবতে পছন্দ করে। অনেকে পড়ার চেয়ে বেশি এক্সট্রা ভাব নেয়। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো তাদের ইগো। সবকিছুতে বাবা মা রেস্পন্সিবল কারো সাথে ছ্যান ছ্যান করে ওঠা অনেকের রেগুলার অভ্যাস। তাদের কন্ট্রোল করা কঠিন।
ফলে তারা অপমান নিতে পারে না। শিক্ষকের শাসন মানতে পারে না।
মাস্টারেরা যেমন ছালামের চেয়ে পয়সা পেলেই খুশি,ছাত্রীরাও তাদের কাজের লোক ভাবতেই প্রেফার করে।
শিক্ষকরা যদি অভিভাবকসুলভ আচরণ করতো,মায়া করে কথা বলতো বাচ্চারাও তাদের আপন ভাবতো। তাদের স্বভাবের জন্য বাচ্চাদের কাছে শিক্ষকেরা নিজেদের খেলো করে ফেলেছে।
সময় থাকতে শোধরাতে না পারলে খবর আছে.....
পুনশ্চঃ শিক্ষকের অপমানজনক কথায় আত্মহত্যা করা লাগলে আমাদের স্কুলের শ্রদ্ধেয় ইউসুফ স্যার, বাবলু স্যার,জাহাঙ্গীর স্যার, বিমল স্যার,রাজ্জাক স্যার, কাশেম স্যারদের ক্লাস যারা করেছে তাদের গণহারে ইঁদুরের মত মরে পরে থাকতে হবে। স্যাররা এখনো আমাদের গালাগালি করেন। আমাকে না পেলে আমার বউকে ফোন দিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন! কই আমরা তো মরি নাই। বরং তাদের গালাগালি লাঠালাঠি আমাদের বাচাঁর অনুপ্রেরণা।
লেখকঃ আইনজীবী ও সমাজকর্মী
Comments
Post a Comment